বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ঈদের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে সবজির বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের মতোই। তবে হঠাৎ বৃষ্টিতে কেনাকাটা কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কম কেনার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন বৃষ্টিতে ক্রেতার উপস্থিতি কম। অন্যদিকে বাজারে মালের সংকট। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় খরচের লাগাম টানতেই কম পরিমাণে পণ্য কিনছেন তারা। যতটুকু না হলেই নয় ততটুকুতে সীমিত রাখছেন কেনাকাটা।
শুক্রবার যশোরের বড় কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। বিকেল বেলা ভিড় থাকলেও অন্য সময়ের মতো কেনাকাটা নেই। আজকের বাজারে আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ছোট আকারের পেঁয়াজ ৮০ টাকা এবং বড় আকারের ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। এছাড়া আজকে লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চায়না রসুন ১৯০-২০০ টাকা, চায়না আদা ৩০০ টাকা, ভারতীয় আদা ৩০০ দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় লাল ও সাদা আলুর দাম অপরিবর্তিত।
বাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শুকুর আলী বলেন, কেনাকাটা আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছি। আগে আলু কিনতাম ৫ কেজি করে, পেঁয়াজ কিনতাম ৩ কেজি করে। এখন আলু কিনি ২ কেজি, পেঁয়াজ কিনি ১ কেজি করে। কম খরচ করার চেষ্টা করছি। সবকিছুর দাম বাড়াতে আমাদের বাজারের খরচে লাগাম টানতে হয়েছে।
বিক্রেতা আতিয়ার রহমান বলেন, মানুষের কেনাকাটা আসলেই কমেছে। আর পেঁয়াজের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ায় যেটার দাম কম সেটাতেই ঝুঁকছেন ক্রেতারা। ছোট যেই ক্রস পেঁয়াজ আছে সেটা আমার বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্য পেঁয়াজের থেকে এটার দাম ১০ টাকা কম।
এদিকে সবজির বাজারের চিত্রও অভিন্ন। এখানেও বিক্রির পরিমাণ কমেছে। বেশিরভাগ সবজির দামই আজকে বেড়েছে। কমেছে অল্প কয়েকটি সবজির দাম। আজকের বাজারে দেশি গাজর ৭০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, উচ্ছে ৭০-৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটোল ৩০-৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০-১১০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২২০-২৫০ টাকা, ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা করে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে উচ্ছে, করলা, কাঁকরোল, ঝিঙা, কচুর লতি, চাল কুমড়ার দাম বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া সাদা ও কালো গোল বেগুনের দাম কমেছে ১০ টাকা। বাদবাকি সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজি বিক্রেতা মেহেদি হাসান বলেন, বাজারে ক্রেতা কমে গেছে। শুক্রবার-শনিবার কাস্টমার একটু বেশি থাকে, কিন্তু তাও তাদের কেনার পরিমাণ কমেছে। যারা আমার কাছ থেকেই সবসময় কিনে, তারাও কেনার পরিমাণ কমিয়েছে। এটা আমার নিজেরই দেখা। তারা আগে দুই কেজি কিনলে এখন কিনেন আধা কেজি করে। দেড় কেজিই কমিয়ে দিয়েছেন। আমি সবজি বিক্রি করি সত্যি, কিন্তু আমিই বলি যে সবজির দাম অনেক বেশি। সবার কেনার ক্ষমতাও নাই।
বাজার করতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে এমন হতো যে—যা যা দরকার সেগুলো তো কিনতামই, আর হুট করে লাগতে পারে এমন সবজিও কিনে রাখতাম। কিন্তু এখন আর সেটা করি না। যা প্রয়োজন তার বাইরে অতিরিক্ত কিছুই কিনি না।
সাধারণত কোরবানি ঈদের সপ্তাহখানেক পরে মাছের চাহিদা বেড়ে থাকে। মাছ বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি বাড়ে। আজকেও এর কোনও ব্যত্যয় ঘটেনি। মাছ বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তবে মাছের দোকানের সামনে ভিড় থাকলেও অনেককেই দেখা যায় দাম জিজ্ঞেস করে চলে যেতে। তারা বাজার ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু দামে পোষাচ্ছে না। আজকের বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৬০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৬৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৫৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০-৮০০ টাকা, টেংরা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা রহিস উদ্দিন বলেন, এখন মানুষের কেনাকাটা কমেছে। মানুষের বেতনের থেকে জিনিসের দাম বেড়ে গেছে—তাই কিনছে কম। এখন আমরা ইলিশ বিক্রি করছি ওজন অনুযায়ী ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত। এটা কিন্তু সবাই কিনতে পারে না। এই ইলিশ যদি ১২০০ টাকার মধ্যে হতো তাহলে মোটামুটি সবাই কম-বেশি কিনতে পারতো। এটা শুধু ইলিশ মাছ না, সব মাছেরই একই অবস্থা, দাম অনেক বেশি। সব মানুষ সব মাছ কিনতে পারে না। আর মাছের দাম বেশি থাকার কারণ হচ্ছে এখন আগের মতো নদী বা বিলে মাছ পাওয়া যায় না। অনেক জেলে বিষ দিয়ে মাছ মারে, তাই অনেক মাছ প্রায় হারিয়েও যাচ্ছে, যেমন আইড় মাছ। আগে নদীতে জাল ফেললে প্রচুর চিংড়ি মাছ উঠতো, এখন আর ওঠে না। এই কারণেই চিংড়ির দাম হাজার টাকার ওপরে।
এদিকে আজকেও গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকা কেজি দরে। এই দুই মাংসের দাম আর কমছেই না। আর মুরগির লাল ডিম ১৫০ টাকা এবং সাদা ডিম ১৪৫ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সাদা ও লাল ডিমের দাম বেড়েছে।
এছাড়া আজকে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামই কমেছে। আজকে ওজন অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগি ১৭২-১৭৫ টাকা, কক মুরগি ২৭৫-২৯৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০-৬২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে ১৫ টাকা, কক মুরগির দাম কমেছে ২৫ টাকা, দেশি মুরগির দাম কমেছে ৮০-১০০ টাকা ও লেয়ার মুরগির দাম কমেছে ৫০ টাকা।
এদিকে, অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম ওঠানামা করলেও মুদি দোকানের পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। আজকে প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১০৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, কৌটাজাত ঘি ১৩৫০ টাকা, খোলা ঘি ১২৫০ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এলাচি ৪০০০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৬০০ টাকা ও কালো গোলমরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।