বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে দেশ ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও জড়িত মালিক ও চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। শনিবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে মিলনায়তনে মৃত প্রসূতি তাজরিন সুলতানা রুকু’র চাচা আবদুল আলিম এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
আবদুল আলিমের অভিযোগ, গত ১৬ মে রাত ১১ টার দিকে প্রসূতি তাজরিন সুলতানা রুকু’কে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার না থাকায় জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরামর্শে মনিরামপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানায় মা ও বাচ্চা ভাল আছে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে বলে। কিন্তু আমরা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে অজ্ঞাতনামা কিছু দালালের খপ্পরে পড়ে দেশ ক্লিনিকে ভর্তি করাই। তখন রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টা। ১৭ মে ভোরে ডাক্তার সন্দীপ কুমার পাল ওরফে এসকে পালকে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে ডাকা হয়। তিনি ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তাজরিন সুলতানা রুকু’র সিজারিয়ান অপারেশন করেন। কন্যা সন্তান জন্ম হয়। ১৮ মে সকাল থেকে প্রসূতি অস্বাভাবিক পেট ফোলা শুরু হয়। কর্তব্যরত নার্সকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি জানান ডা.এসকে পাল আসবেন রাতে আর বিকেলে আসবেন ডা. শাহীন কবির। বিকেলে ডা. শাহীন কবির এসে রোগী দেখে নার্সদের বলেন- রোগীর পেটে গ্যাস হচ্ছে। সব ওষুধ পাল্টে দাও। নতুন পাল্টানো ওষুধ খাওয়ার রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হয়। রাতে ডা. সন্দীপ পালকে রোগীর অবস্থা জানাই। তিনি বলেন- রোগী ভাল আছে, টেনশনের কারন নেই। পরে আবার রোগীর অবস্থা জানাতে গেলে ডা. সন্দীপ পাল ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনদের মারতে আসেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন রোগীর ডায়রিয়ার লক্ষণ। ওই অবস্থায় ১৯ মে দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহমেদ ক্লিনিকে এলে আমরা তাকে রোগী কাছে নিয়ে যাই। তিনি এসে বলেন-এই কলেরার স্যালাইন কে দিয়েছেন ? বলেই তিনি নিজেই টেনে স্যালাইন খুলে ফেলেন। তখন আমরা বলি ডা. স্যার দিয়েছেন। এই ওষুধ খাওয়ানোর পর রোগী আর কথা বলতে পারছে না। রাজু আহমেদ আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তড়িঘড়ি করে রোগী রেফার্ড করে দেয় দেশ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ২০ মে ভোরে খুলনা সিটি মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগী মারা যায়। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে ২৯ মে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ তদন্ত করলেও আমাদের প্রতিবেদনের কপি দেয়নি।
তিনি বলেন, দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহমেদ, ডাক্তার সন্দীপ পালসহ চারজনের নামে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী সদর আদালতে মামলা করেছি। মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। মামলা তুলে নিতে আসামি পক্ষের লোকজন নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অভিযুক্ত ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘রোগীর যিনি সিজার করেছেন; সেই ডাক্তার সার্জারির উপরে পোস্ট গ্রেজুয়েট ডিগ্রীধারী নয়। আবার অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা যখন অননতি হয়; তখন ডাক্তার তার চিকিৎসার অবহেলা করেছে। তদন্ত রিপোর্ট এখনো আসেনি; তবে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি চিকিৎসকের গাফিলতি রয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলেই ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহমেদ বলেন, মারা যাওয়া রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করলেই তো আমরা অপরাধী নয়। রোগীর রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিয়েছে। এখানে যদি চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কোন গাফিলতি থাকে; সেটা স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তে উঠে আসবে। তারা যেহেতু তদন্ত রির্পোট দেয়নি; তাহলে আমাদেরকে ঢালাও অভিযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।
তিনি জানান, আমি নিজেই অসুস্থ; আমি কাউকে হুমকি দিবো কিভাবে। শুনেছি আদালতে ভুক্তভোগীরা মামলা করেছে; আদালতেই বিচার করবে।’