বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর-খুলনা মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার
যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে সাত কিলোমিটার
যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার
সড়কের উপরিভাগের কোথাও ছোট-বড় গর্ত, আবার কোথাও উঠে গেছে পিচ। আবার কোথাও পিচ জড়ো হয়ে সৃষ্টি হয়েছে উচু ঢিবে। অসহনীয় ধুলার যন্ত্রণার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও সাধারণ জনগণ। এ চিত্র যশোর -ঝিনাইদহ মহাসড়কের খয়েরতলা এলাকার। শুধু এই স্থান নয়; এই সড়কের যশোর অংশের ১০ কিলোমিটারই বেহাল। শহরের অন্য প্রান্তে আরেকটি যশোর -খুলনা মহাসড়ক। সড়কটি ভিন্ন হলেও যশোর ঝিনাইদহের মতো একই দৃশ্য দেখা গেল দুরঅবস্থা। কোথাও পিচ উঠে গেছে। উচু নিচু ঢিবে। অনেক স্থান ভেঙে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু এই দুটি মহাসড়ক নয়।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহৎ তিনটি মহাসড়কের অবস্থা একই। মহাসড়কগুলোর প্রায় ৩৭ কিলোমিটার অংশে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার সম্মুখীন বেশি হচ্ছে। এমনকি ঘটছে প্রাণহানিরও ঘটনা। আর বড় যানবাহনের মালিকরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অনেক বাস ও ট্রাক সড়কের গর্তের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যাচ্ছে। এতে মৃত্যুসহ অনেকে পঙ্গু হচ্ছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসছে না। কাজের মান খারাপ ও অতিবৃষ্টিতে সড়কগুলো আবারও আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙাচোরা সড়কে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে পুরো পিচই (বিটুমিন) উঠে গেছে। ফলে বিটুমিন দিয়ে সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে যশোর থেকে উত্তরবঙ্গের সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র পথ যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার অংশে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চলাচলের জন্য এসব স্থানে মাঝে মধ্যে ইটের সোলিং করে দায়সারা মেরামত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ অবস্থায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি তাদের।
যশোরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর-খুলনা মহাসড়কে ২০ কিলোমিটার, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের নাভারণ থেকে বাগআঁচড়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার, যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া যশোর-ঢাকা মহাসড়কের মনিহার অংশে এক কিলোমিটার সড়ক বেহাল রূপ নিয়েছে। তবে ভাঙাচোরা সড়কের বিস্তার আরও বেশি। এসব সড়কের মধ্যে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে।
যশোর সওজ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-খুলনা ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে সৃষ্ট গর্তগুলো ইট দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। যা বৃষ্টি হলেই বড় গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ইটের আদলা ও খোয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে গোটা সড়কে। খানাখন্দ ও ইটের আদলা, খোয়াভর্তি এসব সড়কে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া সড়কগুলো চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনেরও যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
শহরের খয়েরতলা এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের যশোর ঝিনাইদহ অংশের মহাসড়কের বেহাল দশা। এখানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। বিভিন্ন সময় খোয়া দিয়ে মেরামত করে গেলেও তা টেকসই হয়নি। সর্বশেষ কিছুদিন আগে এই সড়কের চুড়ামনকাঠি বাজার পুরো বাজার অংশের সড়কটিতে ইটের সলিং করে রেখে চলে গেছে। এখন প্রতিনিয়ত এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।’
এ সড়কে নিয়মিত থ্রি-হুইলার চালান মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে খানাখন্দ আর ভাঙা ইটের টুকরোর কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। এতে গাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কে ভাঙা ইটের অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহনগুলো বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয়।’
যশোর খুলনা মহাসড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন একটি স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক লাবুয়াল হক রিপন। তিনি বলেন, ‘যশোর-খুলনা মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত অফিস করতে হয়। সড়কের যে অবস্থা ইজিবাইকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিগত দিনে সড়ক সংস্কারের নামে টেন্ডারবাজি এবং দুর্নীতি করা হয়েছে।’ মুড়লি মোড়ের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুধু এ সড়ক নয়, আমাকে যশোর-সাতক্ষীরা, যশোর-নড়াইল-ঢাকা সড়কসহ জেলার বিভিন্ন মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও তা মেরামত ও স্থায়ী সংস্কার করতে সড়ক বিভাগ বারবার ব্যর্থ হয়েছে।’
যশোর-সাতক্ষীরা মড়কে যাতায়াত করা এক ট্রাক চালক বলেন, ‘এই সড়ক দেশের কত গুরুত্বপূর্ণ। বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর রয়েছে। বন্দর দুটির রাজস্ব আসে হাজার হাজার কোটি টাকা। অথচ সড়কটি বেহাল। যাতাযাত করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঝিকরগাছা লাউজানি, পুলেরহাট, নাভারণ এলাকায় একেবারে চলাচলের অনুপোযুগি হয়ে পড়েছে।’ স্থানীয়রা জানান, রাস্তার অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, ২০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে দেড় ঘন্টার বেশি লাগে। রাস্তায় বড় বড় গর্ত থাকায় গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, টায়ার বার্স্ট হচ্ছে। সড়কে এ অংশে চলাচল খুব মুশকিল। ভালো মানুষও অনের সময় এ পথে চলাচল করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অতিদ্রুত যেন এ রাস্তাটি ঠিক করা হয় — এটাই দাবি স্থানীয়দের।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘চলতি বছর অতিবৃষ্টিতে যশোরের বিভিন্ন মহাসড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে যশোর-খুলনা, যশোর-ঝিনাইদহ, যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বেশকিছু অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো আমরা জরুরি সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে থাকি। এ বছর যশোর-খুলনা মহাসড়কে আড়াই কিলোমিটার রাস্তার ঢালাই কাজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মহাসড়ক জরুরি সংস্কারের জন্য গত সেপ্টেম্বর মাসে সাত কোটি টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।’