এস এম জালাল
ভাল নেই সবজি উৎপাদনকারী কৃষক। যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলৎদিহি গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন তরফদার জানান, কৃষি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বর্তমানে সবজির বাজার দর খুবই কম। সবজি বাজারে নিয়ে গেলে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের টাকাও উঠছে না। উৎপাদিত সবজির কাক্সিক্ষত দাম না পেয়ে হতাশ। তিনি অভিযোগ করেন মাস দেড়েক আগেও সবজির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রায়শই রাজনৈতিক দলগুলোকে মাঠে নামতে দেখা গেলেও এখন তাদের কোনো কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। কৃষকের এ অবস্থায় মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কতটুকু কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন কৃষকের। কৃষকের দাবি মৌসুমে উৎপাদিত অতিরিক্ত সবজি তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দামে সরকার ক্রয় করুক, না হয় সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে নির্মাণ করা হোক।
সম্প্রতি যশোর কৃষকদলের কয়েকটি কৃষক সমাবেশে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ ও দাম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। কাঁচাবাজারে দ্রব্যমূল্য ক্রমেই কমছে। ঊর্ধ্বগতির কারণে মাস খানে আগেও সাধারণ মানুষ ছিল বিপাকে। বাজারের খরচ বাড়তে থাকায় কেনার পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাজারে সবজির দাম কমায় বদলে গেছে সে চিত্র। শত টাকার সবজি কিনলেই ভরে যাচ্ছে থলে। এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম কমছে কেজি প্রতি ৫০ টাকা। আর পেঁয়াজে কমেছে কেজি প্রতি ৮০ টাকা। প্রতিটি সবজির দাম এখন ভোক্তার নাগালের মধ্যে। তবে ভাল নেই এ সবজি উৎপাদনকারী কৃষক।
রেলবাজারে সবজি বিক্রেতা হাফিজুর রহমান বলেন, সরবরাহ বাড়ায় শাক-সবজির দাম। যশোরের বাজারগুলোতে যে আলু এক মাস আগে ৭০ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে, তা এখন ১৫ থেকে ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ১২০ টাকার পেঁয়াজ এখন ৪০ টাকা। শুধু আলু, পেঁয়াজ নয়, পাশাপাশি কম দামে মিলছে সব ধরনের সবজি। কিছু কিছু সবজি একেবারেই অবিশ্বাস্য কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারভেদে কম বেশি হলেও যশোরের রেলবাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকার সবজি কিনলেই থলে ভরে যাচ্ছে।
যশোরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকা, ফুলকপি ৫-২০ টাকা পিস, একই দামে বাঁধাকপি। শালগম ২০-২৫ টাকা, শিম ২০ টাকা , টমেটো ২০-২৫, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা, রসুন ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকায়, এছাড়া, বাজারে লালশাকের আঁটি মানভেদে ৫-১০ টাকা। ভোক্তার বলেন, সবজির দাম কম। এখন বাজার করতে যা খরচ তার চেয়ে যাতায়াত ভাড়া বেশি গুণতে হচ্ছে।
যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলৎদিহি গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন তরফদার আরও জানান, এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে আলু, সাত বিঘা মূলা, এক বিঘা পটল, দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি ও পাতা কপি চাষ করেছেন। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ হাজান টাকা। ইতোমধ্যে এক বিঘা জমির আলু তুলে ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এক বিঘা জমিতে আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। লস হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এখনও ৬ বিঘা জমির আলু তুলতে বাকি আছে রয়েছে। বর্তমান দামে আলু বিক্রি করতে হলে সাত বিঘা জমিতে আলু আবাদে লস হবে দুই লাখ টাকা। তার দাবি উৎপাদিত সবজি তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দামে সরকার ক্রয় করুক। তা না হলে কৃষক বাঁচবে না।
এছাড়া চুড়ামনকাটি এলাকার কৃষক আবদুল খালেক বলেন, বাজারে দাম নেই, পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আসছেনা। জমিতে নষ্ট হচ্ছে বাঁধাকপি ও ফুলকপি। চাষি ইদ্রিস আলী, রুহুল আমীন, জহুরুল ইসলাম, সামিউল আলম জানান, অনেক আশা নিয়ে সবজি আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভাল হয়েছে। মাঠজুড়ে শুধু কপি দেখা যায়। একেকটি কপির ওজন হয়েছে গড়ে দেড় থেকে তিন কেজি। এখনও বিক্রি করতে পারিনি। জমিতে অনেক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সার ও কীটনাশকের দোকান থেকে ধার দেনা করে আবাদ করছি। বিক্রির পর দেনা পরিশোধ করবো। কিন্তু সে আশায় ভাটা পড়েছে।
যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (অতি. দা.) কিশোর কুমার সাহা বলেন, কৃষক যাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় তার জন্য মূল্য সহায়তা নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সরকার অর্থছাড় দিলেই কৃষককে মূল্য সহায়তা প্রদান করা হবে। এতে কৃষককে আর ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না। কৃষক পণ্য উৎপাদন খরচের চেয়ে সামান্য লাভ পাবেন এ মূল্য সহায়তায়।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বিএনপি সব সময় কৃষকের উন্নয়নে কাজ করছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকের জন্য কৃষি বীমা চালু করা হবে। এ বীমার একটি অংশ সরকারের তরফ থেকে দেয়া হবে। এছাড়া কৃষক বাঁচাতে সরকারিভাবে ক্রয়কেন্দ্র খোলা হবে ও হিমাগার স্থাপন করা হবে। ফলে কৃষক আর ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না বলে তিনি জানান।