বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শহরের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুসলিম একাডেমি। সোমবার সকাল থেকেই স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ বোঝাই করে বইখাতা নিয়ে হাজির হন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলেও শেষ পর্যন্ত এদিন বাজেনি ক্লাস শুরুর ঘন্টা। শেষমেষ বসে থেকে থেকে কেউ চলে যান; কেউ বা ক্যাম্পাসে করেছেন খেলাধুলা। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও ক্লাস নেননি কেউ। শুধু এই বিদ্যালয় নয় যশোর জেলার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দৃশ্য ছিলো একই রকম।
শিক্ষকেরা বলছেন, ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ও এক হাজার ৫০০ টাকা মেডিক্যাল ভাতা দাবির আন্দোলনে ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এই কর্মবিরতি। তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সোমবার সকাল থেকে জেলা শহর ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষকেরা শিক্ষক মিলনায়তনে আড্ডা দিচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকরাও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক মিলনায়তনের সামনে বড় করে ব্যানার টাঙিয়েছেন। তাতে লেখা শিক্ষকদের কর্মবিরতি। কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বিদ্যালয়গুলোতে আসলেও শ্রেণীকক্ষে আড্ডা দিতে দেখা গেছে। কেউ বা খেলার মাঠে খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। আবার কোন কোন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতেও দেখা গেছে।
মুসলিম একাডেমির প্রধান শিক্ষক পল্লব কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমরা কারও প্রতিপক্ষ না। সরকারের প্রতিপক্ষ না। শিক্ষকের নায্য দাবির উপর হামলার প্রতি সমর্থন জানিয়ে আমাদের কর্মবিরতি। তিনি বলেন, এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কেননা তাদের সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। ক্ষতি জেনেও আমরা অসহায়। তার পরেও শিক্ষাদের পড়াশোনা করতে নিদের্শনা দিচ্ছি। আমরা বিদ্যালয়ে আসলেও কেউ শ্রেণী কক্ষে যাচ্ছেন না।’
কয়েকজন শিক্ষকেরা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্মবিরতি পালন করছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান পালন করছে না। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের ২০ শতাংশ, ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন যতক্ষণ জারি না হবে, ততক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে তারা।
গত রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
দুপুর দেড়টায় তারা পুলিশের অনুরোধে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ প্রেসক্লাবের সামনেই অবস্থান ধরে রাখেন। দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যেতে বলে। কিন্তু শিক্ষকদের একটা অংশ তা মানতে রাজি হয়নি। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ভুয়া ভুয়া বলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ পরপর বেশ কিছু সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেয়।
শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে সোমবার থেকে সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকেরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।