বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের বাঘারপাড়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাসনে ইন্টারন্যাশনালের সহায়তা উপকরণ লুটের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দিবাগত রাতে বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর বাজার এলাকার পপুলার রাইসমিলের একটি ঘর থেকে প্রতিবন্ধী, পঙ্গু, দুস্থ নারী ও দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের জন্য রাখা ৩৬৭টি হুইলচেয়ার, অটোরিকসা, সেলাইমেশিন ও বাইসাইকেল লুট হয়। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গোলাম রসুল নামে এক ব্যক্তি।
আয়োজকরা জানান, তুরস্কভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হাসনে ইন্টারন্যাশনাল তিন বছর ধরে বাঘারপাড়ায় প্রতিবন্ধীদের হুইলচেয়ার ও আটোরিকসা, দুস্থ নারীদের সেলাইমেশিন, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল দিয়ে আসছে। এ বছর বিতরণের জন্য কয়েক মাস আগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও সুধিজনদের কাছ থেকে সুবিধাভোগীদের নামের তালিকা নেয়া হয়। এ বছর উপজেলায় ১৪০ জন প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার, ২০ জন পঙ্গু ব্যক্তিকে আটোরিকসা, ১০৭ জন গরিব অসহায় মহিলাকে সেলাইমেশিন এবং ১০০ জন গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীকে বাইসাইকেল দেয়ার জন্য তালিকা তৈরি করা হয়। সংস্থাটির সঙ্গে কাজ করতেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজি। তার মালিকানাধীন রায়পুর বাজারের পাশে পপুলার রাইসমিলে সহায়তা উপকরণগুলো রাখা হয়। শনিবার সকালে সহায়তা উপকরণগুলো বিতরণের আয়োজন করা হয়। সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাঁধায় অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর হাসনে ইন্টারন্যাশনালের চিফ অপারেশন কেমাল সারদিস ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইয়াশরাক মেলেক কবির মাঝপথ থেকে ফিরে যান। সহায়তা উপকরণগুলো বিতরণ করতে না পারায় বিপুল ফারাজীর রাইস মিলে মজুদ রাখা হয়। শনিবার রাত ১০ টা থেকে ১১টার ভিতরে রাইস মিলে হানা দিয়ে সহায়তা উপকরণ লুট করে নিয়ে যায় বিএনপির নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত। ঘটনার সময় আশেপাশের মানুষ ছুটে আসে দুর্বৃত্তদের ধাওয়া দেয়। মালামাল লুট হওয়ার সংবাদ পেয়ে ছুটে আসা আমিনুর রহমান নামের এক যুবক সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘটনাটি লাইভ সম্প্রচার করেন। আমিনুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার প্রায় শেষের মুহূর্তে লুটপাটে অংশ নেয়া চারজনকে আটক করে স্থানীয়রা। এ সময় আটক এক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি ফেসবুক লাইভে প্রচারও করা হয়। পরে রায়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস আটকদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান। নানাভাবে হুমকি দেয়ায় তিনি ফেসবুক থেকে ভিডিও সরিয়ে ফেলেছেন। তবে ভিডিওটি অনেকেই ডাউন লোড দিয়ে রেখেছে।
রায়পুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাইরে ছিলাম। সেখান থেকে ফিরে দেখি এক জায়গায় অনেক লোক। এতো লোক কেন-জানতে সেখানে যাই। যেয়ে শুনলাম হুইলচেয়ার, অটোরিকসা, সেলাইমেশিন ও বাইসাইকেল নিতে সেখানে লোকজন এসেছেন। কোনো কিছু না বলে সেখান থেকে আমি ফিরে এসেছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভি করেননি রায়পুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস।
তবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্যক্তির দায় সংগঠন বহন করবে না।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম বলেন, হুইলচেয়ার, অটোরিকসা, সেলাইমেশিন এবং বাইসাইকেল লুটের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।