বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার দেয়াড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক পরিবারের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, স্কুলের মোট ৩৩ শতক জমির মধ্যে ১৯৯৩ সালে ফরিদা বেগম ও তার ভাই জিয়ারুল ইসলাম স্কুলের নামে জমিটি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে দান করেন। জমির সাবেক দাগ ৩৪১ এবং বর্তমান দাগ ৮৮৭ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। যদিও স্কুলটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই এটি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে।
বেশ কয়েকমাস আগে রোজার ছুটির সময়ে বাড়ি নির্মাণ সামগ্রী আনা হয় স্কুল মাঠ চত্বরে। পরে কোরবানি ঈদের সময় স্কুল ছুটির মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই বিদ্যালয়ের ৪ শতকের বেশি জায়গায় বর্তমানে একটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২ শতক বিদ্যালয়ের মূল জায়গা দখল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মোছা. শামশীরা পারভীন। তবে নির্মাণকাজ অর্ধেক করার পর পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় হারুন অর রশিদ ও তার দুই ছেলে ফাহাদ হোসেন সোহাগ এবং মামুনুর রশিদ শাহিনের নেতৃত্বেই এই অবৈধ নির্মাণ কাজ চলছে। হারুন আর রশিদ ও তার ছেলে ফাহাদ হোসেন সোহাগ ও অপর ছেলে মামুনুর রশিদ বর্তমান সময়ে প্রভাবশালী দুটি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরপরই হারুন আর রশিদ ও তার পরিবারের আচরণে পরিবর্তন আসে। এরপর থেকেই তারা স্কুলের জমি দখল কার্যক্রম শুরু করেন এবং সকল প্রতিবাদ উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ শুরু করেন।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার উপসহকারী পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, আমি কোর্টের আদেশে স্কুলে গিয়ে ওই জায়গায় নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। কোর্ট থেকে ওই জমিতে বর্তমানে ১৪৪/১৪৫ ধারা জারি করা হয়েছে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. শামশীরা পারভীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই জায়গা স্কুলের রাস্তার জায়গা। ওখানে আগে আমাদের স্কুলের সাইনবোর্ড ছিল।
তিনি আরও জানান, তারা স্কুলের জায়গা দখল করে নির্মাণকাজ শুরু করে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে আমি একটা মামলা করি। পরে সরজমিনে পুলিশ এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এই কারণে জমির মালিকের ছেলে সোহাগ পুলিশের সামনে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছে।
সহকারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুন্সী মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, এটা আমাদের কাজ না। তবে এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেছিল তাই আমরা এসিল্যান্ডকে জানিয়েছিলাম। পরে তিনি সরজমিনে গিয়ে জায়টি মেপে ঠিক করে দিয়ে এসেছিলো।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, জায়গাটি নিয়ে বর্তমানে কোন ঝামেলা নেই। জায়গাটির বিষয়ে আমরা এসিল্যান্ডকে জানিয়েছিলাম তিনি আমিন নিয়ে গিয়ে জায়গার সীমানা করে দিয়েছে।
ঊর্ধ্বতন হিসাবে আপনাদের কোন দায়িত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এসিল্যান্ডের কাজ তাদের জানিয়েছি। আমি প্রধান শিক্ষককে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে দিয়েছি। উনি চাইলে এ বিষয়ে যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফুল আলম ওই জায়গা স্কুলের না বলে দাবি করে বলেন, জায়গাটি নিয়ে আমরা স্কুলে ভিজিট করেছি ও স্থানীদের সাথে কথা বলেছি। জায়গাটি স্কুলের না। জায়গাটি মালিকানা বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা ওই জায়গাটি নিয়ে জেলা প্রশাসক, থানা নির্বাহি অফিসার ও এসিল্যান্ডকে জানিয়েছি।এসিল্যান্ড নিজে সরজমিনে গিয়েছিলেন।
এদিকে স্কুলে ওই জায়গা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে জানালেও ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা ভিজিটে আসেনি বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষিকা মোছা. শামশীরা পারভীন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফাহাদ হোসেন সোহাগ বলেন, আমরা জমির দাতা। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আমলে আমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে রেখেছিল। এসিল্যান্ড সরজমিনে এসে স্থানীয়দের নিয়ে সমাধান করে দিয়ে গিয়েছিলো। তাহলে কিভাবে এই জমির মালিকানা স্কুল দাবি করে এটা আমার বোধগম্য নয়।