বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর পৌরসভার অযৌক্তিক কর বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করেছে পৌর নাগরিক কমিটি। সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই বিক্ষোভ সমাবেশ, অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
যশোর পৌরসভার অযৌক্তিক কর বৃদ্ধির প্রতিবাদসহ ছয় দফা দাবিতে পৌর নাগরিক কমিটির আহ্বানে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে যশোর টাউন হল ময়দানে সমবেত হন। এরপর নেতৃবৃন্দ বিক্ষোভ মিছিলসহ যশোর পৌরসভা প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পৌর নাগরিক কমিটি যশোরের আহ্বায়ক শওকত আলী খান। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, সদস্য সচিব জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিম উর রহমান, হাচিনুর রহমান, ৮ নং ওয়ার্ডের গোলাম ফারুক লিটন, ৬ নং ওয়ার্ডের নাজিম উদ্দিন, ১ নং ওয়ার্ডের লুৎফর রহমান, ২ নং ওয়ার্ডের এ এফ নসরুল্লাহ, ৩ নং ওয়ার্ডের জাহিদুল ইসলাম মনু, ৪ নং ওয়ার্ডের কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, ৭ নং ওয়ার্ডের সাঈদ আহমেদ নাসির শেফার্ড, ৯ নং ওয়ার্ডের হাসান হাফিজুর রহমান প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে নেতৃবৃন্দ ছয় দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপির ছয় দফা দাবি হলো, পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে পৌর নাগরিক কমিটি যশোরের সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলামের সময়কালের পর থেকে সকল অ্যাসেটমেন্ট ও কর বাতিল করতে হবে। নতুন করে অ্যাসেসমেন্ট ও কর নির্ধারণ করতে হবে; করের বৈষম্য দূর করতে হবে; অ্যাসেটমেন্ট করার ক্ষেত্রে সেবার মানের উপর নির্ভর করতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ করতে হবে পৌর নাগরিক কমিটি যশোরের সাথে আলোচনা করে। ইতিপূর্বে নাগরিক কমিটির সাথে সমঝোতার পর থেকে সকল অ্যাসেটমেন্ট ও বর্ধিত করকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে; আদায়কৃত উক্ত কর পর্যায়ক্রমে সমন্বয় করতে হবে। খাতওয়ারী সেবা না থাকলে খাতওয়ারী কর নেওয়া বন্ধ করতে হবে। পানি কর বাতিল করতে হবে ও সাপ্লাইয়ের লাইন ঐচ্ছিক করতে হবে। ময়লা-আবর্জনা নেয়ার জন্য কোন টাকা নেয়া যাবে না।
ডাস্টবিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং সময়মতো ডাস্টবিন থেকে ময়লা অপসারণ করতে হবে। অ্যাসেসমেন্ট ও কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্ত করে তা প্রকাশ করতে হবে এবং দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হবে। পৌর প্রশাসক বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদানকালে যশোর পৌরসভার পৌর প্রশাসক, পৌর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার সচিবসহ উর্ধŸতন কোন কর্মকর্তাকে না পাওয়ায় স্মারকলিপি গ্রহণ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু।
এ সময় দাবি আদায়ে পৌর নাগরিক কমিটি যশোরের পক্ষ থেকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা করবেন বলে জানান পৌর নাগরিক কমিটি যশোরের নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, পৌরসভা একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখের বিষয় পৌরসভা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নমূলক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পালন করছে। খাতওয়ারি সেবা নেই কিন্তু কর বৃদ্ধি করছে দফায় দফায়। অযৌক্তিক পৌর করের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলামের সময় নাগরিক আন্দোলনের মুখে পৌরসভা ও নাগরিক কমিটির মাঝে একটা সমঝোতা চুক্তি হয়। যার মূল কথা ছিল ৫ বছর অন্তর নতুন করে কর অ্যাসেটমেন্ট করার ক্ষেত্রে পৌর নাগরিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কর নির্ধারণ করতে হবে।
আমরা অন্তত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, পৌর কর্তৃপক্ষ সেটা ভঙ্গ করে আসছে এবং অস্বচ্ছ, অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কর নির্ধারণ করছে। অ্যাসেটমেন্টর পদ্ধতিও প্রশ্নবিদ্ধ, এক্ষেত্রে দুর্নীতিও হচ্ছে, যা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। আমরা পৌরসভার কাছ থেকে পানি কিনি। তা ব্যবহার অনুপযোগী ও প্রবাহের গতি খুবই ক্ষীণ। তারপরও করের ১০% পানি কর আমাদের নিকট থেকে আদায় করা হয়- যাহা অযৌক্তিক। পয়প্রণালীর জন্য আমরা কর দিই, তারপরও বাড়ি থেকে আবর্জনা নিতে টাকা দিতে হয়। অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপ্রতুল। সামান্য বৃষ্টিতে অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা আশা করবো পৌর কর্তৃপক্ষ পৌর নাগরিক কমিটির উপরোক্ত দাবিসমূহ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন এবং উক্ত বিষয়সমূহ সমাধানের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে উদ্যোগ নিবেন। অন্যথায় পৌর নাগরিক কমিটি যশোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।