কাজী নূর
সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিবছরের মত প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৩ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বিপণন ও মজুত বন্ধ থাকে। এর ঠিক আগের দিন শুক্রবার তাই সকাল সকাল বাজারে এসেছিলেন জুতা প্রস্তুতকারক একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির যশোর অঞ্চলের ব্যবস্থাপক আলী আজম। কিন্তু বাজারে এসে ইলিশের দাম শুনে হতাশ তিনি। বাংলার ভোরকে তিনি বলেন, বড় বাজারে প্রায়ই ঢোকা হয়। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে আজ দেখছি ইলিশের দাম অত্যধিক। মনে করেছিলাম মৌসুমের শেষ দিনে একটু বেশি করে কিনব। কিন্তু তা আর হলোনা তাই ২৮০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি ওজনের একটি মাছ নিয়েই বাড়ি ফিরছি।
জানতে চাইলে ইলিশ বিক্রেতা এরশাদ আলী বলেন, গত কয়েকদিনে যশোর বাজারে ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলেও দাম কমার পরিবর্তে হয়েছে উল্টোটা। কারণ পাথরঘাটা সহ সব মোকাম থেকে বাড়তি দামে ইলিশ কিনতে হয়েছে। তার উপর গাড়ি ভাড়া ও পথে নানা খরচ। স্বাভাবিকভাবেই এসব খরচ ইলিশের মূল দামের সাথে যুক্ত হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজ প্রচুর পরিমাণে ইলিশ বিক্রি হওয়া উচিত। কিন্তু ক্রেতারা এসে দাম শুনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। হয়ত ওই বেলায় এ খরা কাটিয়ে উঠতে পারবো।
এরশাদ আলী আরো বলেন, বর্তমানে ৪ পিসে ১ কেজি ৮০০ টাকা, ৩ পিসে ১ কেজি ১১০০ টাকা, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ২৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি পাবদা মাছ ৩৫০ টাকা, পারশে ৪০০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, বাইন ৮০০ টাকা, রুই ৪০০ টাকা, শিং ৪০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, হরিণা চিংড়ি ৮০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ১১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছ বিক্রেতা মেহের হোসেন বলেন, পুজোর কারণে হিন্দু সম্প্রায়ের অনেক বিক্রেতা শুক্রবার দোকান বসায়নি। তার উপর বাজারে মাছের সরবরাহ কম। তাই মাছের দাম উর্ধমুখী।
এদিকে যশোর বড় বাজার ও ঘোপ বউ বাজার ঘুরে দেখা গেছে সব রকম সবজি ও অন্যান্য মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে বেশ ঝাঁজ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সবজির দামও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান বড় বাজারের (নিচের বাজার) বিক্রেতা মকবুল হোসেন। তিনি জানান, এমনিতে সবজির দাম কমতির দিকে। আগাম শীতকালীন সবজির সরবরাহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এমন বৃষ্টি সবজি চাষের জন্য ক্ষতিকর।
বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে কাঁচা মরিচ মানভেদে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা, কলা ৪০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, সবুজ শাক ৩০ টাকা, কচুর মুখি ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেরস ৬০ টাকা, ধুন্দল ৩০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, কুমড়ো মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, উচ্ছে ১১০ টাকা, বেগুন মানভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কুশি ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, কচুর লতি ৩০ টাকা, ওল ৭০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। লাউ ও চাল কুমড়ো ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে বড় বাজার কালী বাড়ী রোডের কাঁচা মরিচের আড়তদার বাবু বিধান সাহা জানান, পুজোর ছুটির কারণে কয়েকদিন ভারত থেকে মরিচ আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেশে উৎপাদিত মরিচ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বিধায় মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি রফতানি বাণিজ্য স্বাভাবিক হলে মরিচের দাম কমবে বলে জানান বিধান সাহা।
এছাড়া আগাম শীতকালীন সবজি পালং শাক ৪০ টাকা আঁটি, ফুলকপি মানভেদে প্রতি কেজি ১২০ থেকে ২০০ টাকা, পুঁই মিচুড়ী ১২০ টাকা, শিম মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, বিটরুট ১৪০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা, লেয়ার ৩৩০ টাকা, সোনালী ২৬০ টাকা, দেশি ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মুরগি বিক্রেতা নুরুন্নবী জনি জানান, মাছের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগির উপর চাপ বেড়েছে।
শহর ও শহরের আশেপাশের অনেক স্থানেই গরুর মাংস ব্যবসায়ীরা প্রায়ই মাইকিং করে গরুর গোশ বিক্রি করছেন ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকা কেজি দরে। তরে কাঠেরপুল গরুর মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সাব্বির বিফ হাউসের পরিচালক টিটো জানান, গরুর মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ক্রেতারা বলছেন সিণ্ডিকেটের কারণেই গরুর গোশের দাম কমছে না, তা নাহলে শহরের পাশের ব্যবসায়ীরা কিভাবে কম দামে বিক্রি করেন। এছাড়া খাসির মাংস ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বাজারের চাল চান্নী ঘুরে দেখা গেছে সব রকম চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও ক্রেতা সংখ্যা কম। চালের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান লোকনাথ ভান্ডারের মালিক অজয় কুমার সাউ বলেন, অন্যান্য সময়ের চাইতে এবার চালের দাম কম থাকলেও বাজারে ক্রেতার দেখা মিলছে না। হয়ত পুজোর ছুটি শেষ হলে চালের বাজার চাঙ্গা হবে।
অজয় সাউ বলেন, বর্তমানে বাসমতি চাল ৮৬ টাকা, মিনিকেট ৬৫, আঠাশ ৫৮ থেকে ৫০ টাকা, কাজল লতা ৬০, নাজির শাইল ৮২, কাটারি ভোগ ৮০, মোটা স্বর্ণা ৫৪, সুবল লতা ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের দাম গত এক সপ্তাহ যাবত স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা লিটার, পাম তেল ১৭০ টাকা কেজি, সরিষার তেল ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া আটা ৪৬ টাকা, ময়দা ৬০ টাকা, দেশি মসুরির ডাল ১৪৫ টাকা, মোটা মসুরির ডাল ৯৫ টাকা, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, দেশি মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, এলসি মুগ ডাল ১২০ টাকা, সাদা চিনি ১১০ টাকা, লাল চিনি ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বড় বাজার গোহাটা রোডের মুদি পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা শ্যামল ট্রেডার্সের মালিক শ্যামল কুন্ডু জানান, আটার দাম সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য মালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
এদিকে ডিমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে লাল ডিম গ্রেড অনুযায়ী ৪২ থেকে ৪৬ টাকা, সাদা ডিম ৩৮ টাকা, সোনালী মুরগির ডিম ৪৮ টাকা, হাঁসের ডিম ৬০ থেকে ৬৪ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৭২ টাকা, কোয়েল পাখির ডিম ১০ টাকা প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে। খালধার রোডের পাইকারি ও খুচরা ডিম বিক্রেতা আনিস এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় সব রকম ডিমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।